শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক কোটা-সংস্কার আন্দোলনকে তৎকালীন সরকার নজিরবিহীন নৃশংসতায় দমনের চেষ্টা করে। এর ধারাবাহিকতায় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান এবং গুরুতর আহত হন। অপরদিকে, তৎকালীন সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব হত্যার দায় অস্বীকার করে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে তাদের শক্তি প্রয়োগের বৈধতা দাবী করে। এ সময় সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দায়ের করা হয়। লয়্যার ফর এনার্জি, এনভায়ার্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেই সমস্ত মামলার তালিকা থেকে কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরের ১২টি এবং চট্টগ্রাম মহানগরের ১০টি থানায় রুজুকৃত সর্বমোট একশ’টি মামলার এজাহার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলায় দণ্ডবিধি ও অন্যান্য ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন ধারার অধীনে আনীত অভিযোগসমূহ আদালতে প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই এজাহারসমূহ থেকে উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- সেখানে বর্ণিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারীদের দমনে ব্যবহৃত বিবিধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বুলেটের যথেচ্ছ ব্যবহার।
একশ’টি এজাহার থেকে প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও বুলেটের বিবরণ:
আগ্নেয়াস্ত্র ও বুলেটের বিবরণ | সংখ্যা |
শটগানের শিসা কার্তুজ | ১২,৩৪০ রাউন্ড |
চায়না ৭.৬২ এমএম, এসএমজি, টরাস ৯ এমএম ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের বুলেট | ৪,৩১৬ রাউন্ড |
পিস্তলের গুলি | ২৫৬ রাউন্ড |
রাবার বুলেট | ৮,৯৯৪ রাউন্ড |
লাইট হ্যান্ড গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেড | ১৬টি |
লং ও শর্ট গ্যাস সেল | ১,৮৪৭ রাউন্ড |
টিয়ার গ্যাস সেল | ৮৮৬ রাউন্ড |
টিয়ার গ্রেনেড | ০১টি |
সাউন্ড গ্রেনেড | ৯৮৪টি |
প্রজেক্টাইল | ৪৮টি; |
মাল্টি ইম্প্যাক্ট | ০৩টি |
র্যান্ডম মুভমেন্ট | ০৩টি |
কাইনেটিভ | ৬৮টি |
ভারী বল কার্তুজ | ৬২টি |
ফ্লাস | ০৪টি |
উক্ত তালিকার বিবরণ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের সর্বমোট বুলেটের (রাবার বুলেট ব্যতীত) সংখ্যা ১৭,০২৯ টি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক স্পষ্টতই ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-এর সীমা লঙ্ঘনকারী এই ভূমিকা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চেতনা ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। বিশেষত তা অনুচ্ছেদ ৭(১)-এ বর্ণিত জনগনের পক্ষে সংবিধানের অধীন ক্ষমতা প্রয়োগ, অনুচ্ছেদ ৩২-এ বর্ণিত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ, অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বর্ণিত সমাবেশের স্বাধীনতা এবং অনুচ্ছেদ ৩৮-এ বর্ণিত সংগঠনের স্বাধীনতার অধিকারসমূহকে লঙ্ঘন করে। এছাড়াও তা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সনদসমূহ যেমন: International Covenant on Civil and Political Rights, 1966-এর অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত নির্দয় ও অমানবিক আচরণ থেকে সুরক্ষার অধিকার, ৯-এ বর্ণিত ব্যক্তির নিরাপত্তার অধিকার ও ২২-এ বর্ণিত সংঘের অধিকার; এবং The Convention against Torture and Other Cruel, Inhuman or Degrading Treatment or Punishment, 1984-এর অনুচ্ছেদ ২ ও ১৬-তে বর্ণিত নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ থেকে সুরক্ষার অধিকারের পরিপন্থী।
লয়্যার ফর এনার্জি, এনভায়ার্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর অনুসন্ধান থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোটা-সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নির্বিচারে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করেছিল। এসব ঘটনায় তৎকালীন সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার এজাহার থেকে প্রাপ্ত বর্ণনা প্রকারান্তরে বেসামরিক জনসাধারণের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল সংখ্যক বুলেট ব্যবহারের নথিবদ্ধ স্বীকারোক্তিও বটে।
For Details: https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=pfbid0d8xWstLsAr8mXVJKkRcUvsu3G8frmb5VFShbirSMtyQuRefHGEPsM9cCBXfnJ65Cl&id=61554849718279